সেলফি-অটোগ্রাফের আবদার ক্রিকেট তারকাদের সময়ে-অসময়ে মেটাতে হয়। কিন্তু এমন অনেক সময় বা পরিস্থিতি থাকে, যখন তারকাদের পক্ষে ভক্তের আবদার মেটানো সম্ভব হয় না। আর তখনই হয় ভুল বোঝাবুঝি। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে সাকিবের সঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায়।
ফ্লোরিডায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজনির্ধারণী ম্যাচ শেষে টিম হোটেলের লবিতে এক ভক্তের দিকে সাকিব আল হাসানের তেড়ে যাওয়ার ভিডিও নিয়ে এখন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জোর আলোচনা। বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটারদের সঙ্গে ভক্তদের এমন অনভিপ্রেত ঘটনা নতুন নয়; সাকিবের সঙ্গে তো নয়ই। এসব ঘটনায় ক্রিকেটাররা বেশি সমালোচিত হন। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সমর্থকেরা খেলোয়াড়দের এমন জায়গায় নিয়ে যান, যেখানে দাঁড়িয়ে মাথা গরম করতে বাধ্য হন তাঁরা।Eprothomalo
২০১৩ সালে সিলেটে বিজয় দিবস টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলার সময় এক দর্শকের শার্টের কলার চেপে ধরার ঘটনা নিয়ে সাকিবকে বেশ বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছিল। এ ঘটনা ঘটেছিল প্রাইম ব্যাংকের ড্রেসিংরুমের সামনের গ্যালারিতে। প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের খেলা শুরুর আগে অনুশীলন থেকে ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে এক দর্শক সাকিবের কাছে অটোগ্রাফ চেয়েছিলেন। ওই সময়ে অটোগ্রাফ দিতে না চাইলে সাকিবকে উদ্দেশ করে ওই দর্শক কটূক্তি করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সাকিব গ্যালারিতে গিয়ে দর্শকের কলার চেপে ধরেন। পরে স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ ওই দর্শককে মাঠ থেকে বের করে দেয়।
২০১৪ সালের জুনে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ চলার সময় স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করায় এক বখাটে দর্শকের সঙ্গে লেগে যায় সাকিবের। স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করলে স্বামী নিশ্চয়ই বসে থাকতে পারেন না। সাকিবও থাকেননি। কিন্তু তার দোষটা ছিল, স্ত্রীর উত্ত্যক্তকারীর ওপর তিনি চড়াও হয়েছিলেন ম্যাচ চলাকালে, ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে। পরে এটির জন্য বিসিবির শাস্তিও পেতে হয় তাঁকে।
তামিম ইকবালের সঙ্গেও ভক্তের বিতর্কিত ঘটনা আছে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের নেটে ব্যাটিং করছিলেন বাঁহাতি ওপেনারের। এ সময় পেছন থেকে এক দর্শকের মন্তব্য, ‘ম্যাচের সময় তো এই বাড়ি লাগে না!’ বিরক্ত তামিম শুরুতে বাজে ভাষায় প্রতিবাদ জানাতে গিয়েও থেমে যান। পরে সুন্দরভাবে তাদের বুঝিয়ে বলেন, ‘আপনাদের কোনো কাজ নেই? আমি একটু অনুশীলন করছি, ভালো করার চেষ্টা করছি। আর আপনারা এখানে এসে ফালতু কথা বলছেন। নিজেদের কাজ করেন।... আপনি যদি ভালো পারেন, আসেন এখানে, ব্যাটিং করেন।’ পরে দর্শকেরা ‘সরি’ বলে কেটে পড়েন। এখন অবশ্য সমালোচক কিংবা মুগ্ধ দৃষ্টিতে মিরপুরে তামিমদের অনুশীলন দেখার সুযোগ নেই। খেলোয়াড়দের নির্বিঘ্নে অনুশীলনের সুযোগ করে দিতে মাঠের চারদিক কংক্রিটের দেয়ালে ঘিরে দেওয়া হয়েছে।
সেলফি-অটোগ্রাফের আবদার তারকাদের সময়ে-অসময়ে মেটাতে হয়। সাকিব এক সাক্ষাৎকারে বলছিলেন, ‘বেশির ভাগ সময়ে সেলফি তুলতে বিরক্ত লাগে না। তবে দু-একটা পরিস্থিতি আছে যখন মনে হয় , এখন নয়।’ এমন এক কঠিন পরিস্থিতিতে সাকিবকে কীভাবে ভক্তের আবদার মেটাতে হয়েছিল, একবার সে গল্প শুনিয়েছিলেন। ২০১৫ সালের নভেম্বরে স্ত্রীর প্রসববেদনার খবর শুনেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ রেখে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন তিনি। দুবাইয়ে ট্রানজিটে থাকার সময়ই সন্তান জন্মের আনন্দ সংবাদ পান। বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে স্কাইপেতে যখন স্ত্রী-সন্তানের মুখ দেখে আবেগে তাঁর চোখ ছলছল, তখন এক ভক্ত আবদার করছেন সেলফি তোলার! সাকিবের প্রশ্ন, ‘ওই মুহূর্তে কেন? আমার পরিস্থিতি কি বুঝবে না?’
মাশরাফি বিন মুর্তজার এই ঘটনাটা সামনে থেকেই দেখা। গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক তিন-চার দিনের ছুটিতে নড়াইলে রওনা দেবেন। তাড়াহুড়ো করে সন্ধ্যায় মিরপুরের বাসা থেকে রওনা দিলেন বিমানবন্দরে। তীব্র যানজটে পড়ে মাত্র পাঁচ মিনিটের জন্য ধরতে পারলেন না যশোরের ফ্লাইট। মাশরাফির মেজাজ যখন চরমে, ফ্লাইট হাতছাড়ার হওয়ার হতাশা যখন চোখে–মুখে, ঠিক তখনই এক ভক্ত এলেন সেলফি তুলতে। ভক্তকে যত বোঝানো যায়, তিনি ততই নাছোড়! মাশরাফি একটা পর্যায়ে ভীষণ বিরক্ত, অনেক কষ্টে নিজেকে সামলালেন। তবে হতাশা লুকাতে পারেননি অনেক ভক্ত পরিস্থিতি অনুধাবন করতে পারেন না বলে।
এসব পরিস্থিতিতে তারকা যদি মেজাজ হারিয়ে বসেন, তাহলে তাঁদের কি খুব বেশি দোষ দেওয়া যায়! তারপরও তারকাখ্যাতির ‘দায়িত্ববোধ’ বলে একটা কথা আছে, সেটি ভুলে গেলে কিন্তু চলে না।
আরও সংবাদ
বিষয়:
ক্রিকেট
No comments:
Post a Comment